Wednesday, April 8, 2020

COVID19

তিন মাস পরের ঘটনা,

লকডাউনের আজ বিরানব্বই দিন হলো। বিগত বাইশ দিন ফ্ল্যাটের বাইরে পা রাখিনি। গতকাল থেকে পেটে কিছু পড়েনি। শুধু বাচ্চাটার জন্য একটু ভাত বাঁচিয়ে রেখেছিলাম, নুন দিয়ে মেখে ওর মা খাইয়ে দিয়েছে। জানালা দিয়ে তাকালে বাইরে শ্মশান ঘাট নিস্তব্ধতা। রাস্তায় স্তুপাকৃতি জঞ্জাল।

সাফাই করার লোক নেই। সপ্তাহে একদিন আসে। ওদের বস্তিতে অধিকাংশই করোনা আক্রান্ত। শুনছি অনেক জায়গায় রাস্তায় পড়ে আছে মৃতদেহ, শ্মশানে নিয়ে যাবে কে । সরকারি গাড়ি মাঝে মাঝে এসে তুলে নিয়ে জ্বালিয়ে দিয়ে আসছে

সরকারি হাসপাতাল গুলোতে পিলপিল করছে রুগী। টিভিতে আজকাল মাঝেমধ্যেই পুরোনো খবর দেখায়। সাংবাদিক খুব একটা বেচে নেই। খবর দেবে কে?

আমাদের সোসাইটির ছত্রিশটা পরিবারের মধ্যে আমাদের নিয়ে বারোটি পরিবার এখনো টিকে আছি। বাকিরা সরকারি হাসপাতালে বন্দী, অথবা কবরস্থানে, শ্মশানে ছাই হয়ে উড়ে গেছে।

সারাদিনে দু'ঘন্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছি। পাম্প চালানোর সিকিউরিটি নেই। নিজেদেরই গিয়ে চালাতে হচ্ছে। বস্তিগুলো খাঁ খাঁ করছে। ওরাই প্রথমদিকে সবচেয়ে বেশি রাস্তায় বেরোত। ওখান থেকেই করোনার আউটব্রেক শুরু হয়।

তারপর যা ভাবা হয়েছিল, তার চেয়েও বহুগুণ বেশী হারে ছড়িয়েছে covid-19। সারা দেশে এক চিত্র। দেশের জনসংখ্যার চল্লিশ শতাংশ আক্রান্ত। মৃত্যু কোটি ছাড়িয়েছে, সরকারি পরিসংখ্যান এই। সরকার যতদিন পেরেছে হাসপাতালে ভরেছে, এখন বলছে বাড়িতেই থাকতে, কোনও ওষুধ নেই। রোজকার ওষুধগুলোও আর পাচ্ছি না। করোনায় না মরলেও সুগার, প্রেশারে মরছে লোকজন। দেশে হাহাকার পরিস্থিতি।

সরকার হাল ছেড়ে দিয়েছে। বিদেশি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে বলছে প্রচন্ড ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় লোকজন সাবধানতা অবলম্বন করলে এই আউটব্রেক হোত না। তারা নিয়মিত জমায়েত, আড্ডা সব কিছু করে গেছে সরকারি নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে। যার ফল এই মহামারী। জুন' মাসের এই অসহ্য গরমে দিনে দু'ঘন্টা বিদ্যুৎ। ইন্টারনেট পরিষেবা খুবই খারাপ। অত্যন্ত স্লো চলছে নেট।

সবচেয়ে মুশকিল হল মানুষ এখন পেটের টানে মরিয়া হয়ে উঠে বাইরে বেরিয়ে পড়তে চাইছে। পেটের খিদায় বের হলাম কিন্তু অধিকাংশ দোকানদারই করোনা আক্রান্ত হওয়ায় দোকানও খুলছে না পণ্য নিয়ে বাড়ি চলে গেছে আবার অনেক দোকান ভেঙ্গে লুটপাট করে সব কিছু নিয়ে গেছে! দেখে মনে হয় খোলা গরুর ঘর।

খুদার যন্ত্রণা ও শহরের এই পরিস্থিতি দেখে পুরাতন সাইকেলের পিছনে ভাইকে বসিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। শক্তির অভাবে পায়ে যেন কেউ শিকল বেঁধে রেখেছে! যতদূর যাই শূন্য রাস্তা কাউকে দেখছি না, চার পাশে গাছ গুলো নিরব স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর চার পাশ থেকে গন্ধে যেন দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেই জমজমাট গ্রামের বাজার অতিরিক্ত করতে দেখি সব বন্ধ কিছু দোকানে খোলা কিন্তু ভিতরে কিছু নেই সব শূন্য অথচ এখানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর দিকে প্রশাসনের নির্দেশনা না মেনে সরকারি ছুটিতে আসা গ্রামের মানুষ গুলো অবাধে আড্ডা দিয়েছে। অবশেষে ৪০ মিনিটের রাস্তা ৩ ঘন্টা ৩৬ মিনিটে এসে পৌঁছেছি কিন্তু চাবি কাজ করছে না, দরজার তালায় মরিচা ধরছে। অনেক চেষ্টা করেছি তালা খোলার জন্য হঠাৎ পিছন থেকে পাশের ঘরের একজন এসে বললো জয় শ্রীরাম তোরা এখনো জিন্দা আছিস, শ্মশানের পাশে অনেকের পড়ে থাকা লাশ থেকে গন্ধ বের হচ্ছে । শ্মশানে পোড়ার  কাজে একটু সহযোগিতা করতে হবে চল। আমি ক্ষুধার্ত পেটে তার কঙ্কাল শরীর দেখে চেহারা চিনতে পারছিলাম না!

এই মূহুর্তে সরকারের সদিচ্ছার অভাব নেই, কিন্তু যে লোকগুলো কাজ করবে তারাও আক্রান্ত। কাদের নিয়ে লড়বে সরকার? সবই এখন অদৃষ্টের হাতে। লোকজন যদি প্রথমেই খেলার ছলে না নিয়ে গৃহবন্দিত্বকে গুরুত্ব দিতো তাহলে আজ দেশের এই হাল হোত না। পুরোপুরি ভাবে কাঠামো শেষ হয়ে গেছে। কবে যে দেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, কিংবা আদৌ পারবে কিনা সেটাই প্রশ্ন এখন।

বিঃ দ্রঃ উপরের সব ঘটনাই কাল্পনিক এবং বর্তমান ভারতের পেক্ষাপট বিবেচনায় লিখিত। যদি এই দিন দেখতে না চান, তবে সবাই প্রশাসনের নির্দেশ গুলো অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলুন। আশীর্বাদ করবেন ভগবান যেন এটি আমাদের জন্য সত্য না করে অথবা নসিবে না রাখে।

Thursday, August 13, 2015

helapakri

তুই কি আমার দুঃখ হবি?

এই আমি এক উড়নচন্ডী আউলা বাউল
রুখো চুলে পথের ধুলো
চোখের নীচে কালো ছায়া।
সেইখানে তুই রাত বিরেতে স্পর্শ দিবি।
তুই কি আমার দুঃখ হবি?
তুই কি আমার শুষ্ক চোখে অশ্রু হবি?
মধ্যরাতে বেজে ওঠা টেলিফোনের ধ্বনি হবি?
তুই কি আমার খাঁ খাঁ দুপুর
নির্জনতা ভেঙে দিয়ে
ডাকপিয়নের নিষ্ঠ হাতে
ক্রমাগত নড়তে থাকা দরজাময় কড়া হবি?
একটি নীলাভ এনভেলাপে পুরে রাখা
কেমন যেন বিষাদ হবি।

তুই কি আমার শুন্য বুকে
দীর্ঘশ্বাসের বকুল হবি?
নরম হাতের ছোঁয়া হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
নিজের ঠোট কামড়ে ধরা রোদন হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ হলুদ বিকেল বেলায়
কথা দিয়েও না রাখা এক কথা হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
তুই কি একা আমার হবি?
তুই কি আমার একান্ত এক দুঃখ হবি?

ম’রে যেতে সাধ হয়

শাহানা, তুমি গোলাপী জামা প’রে জীবন্ত গোলাপের মতো
ক্যাম্পাসে এসো না, আমার খারাপ লাগে।

সখী পরিবৃতা হয়ে মোগল-দুহিতার মতো
করিডোরে অমন ক’রে হেঁটো না, আমার খারাপ লাগে।

শাহানা, তুমি চিবুক নাড়িয়ে
রাঙা মাড়িতে
দুধ শাদা হাতে
লালিম জিহ্বায়
গিটারের তারের মতো বেজে উঠো না —
দরদালান কেঁপে উঠে, ঢিল পড়ে বুকের পুকুরে,
কাঁপে পানি থিরিথিরি, আমার খারাপ লাগে।

শাহানা, তুমি টিফিন আওয়ারে ক্লাসরুমে ব’সে
অমন করে রাধার মতো দীর্ঘ চুল মেলে দিও না
অন্ধকার করে আসে সারাটা আকাশ
নিবে যায় সবগুলি নিয়ন
কালো মেঘের উপমা দিতে আমার ভালো লাগে না।

শাহানা, তুমি ক্যাফেটেরিয়ায় নিরেট চায়ের কাপে
ওই দুটি ঠোঁট রেখো না;
নিদাঘ খরার পোড়ে ঠোঁটের বাগান,
মরুভূর মতো জ্বলে তৃষ্ণার্ত সবুজ;

আমার মরে যেতে সাধ হয়।

গরম

ঝড়ে উড়ে যায় যায় গো
আমার মুখের বসনখানি
আমার বুকের বসনখানি
আমার রইল না লাজলজ্জা

এত কেন গরম বর্ষাকালে
আমার শরম ওড়ে মেঘের ফোলা পালে
ঘামে ভেজে আমার গৃহসজ্জা
ঘামে ভেজে আমার অলস শয্যা

লোডশেডিং কেন বর্ষাকালে?

এতই যদি গরম বর্ষাকালে
আমি তবে ছাদের জলে ভিজি
এতই যদি গরম বর্ষাকালে
আমি তবে বৃষ্টিজলে ভিজি

ভিজুক আমার যত গরমগুলো
ভিজুক আমার যত শরমগুলো
মধ্যরাতে ছাদে আমি ভিজি
বিজলি জ্বলুক সব উজালা করে

আমায় আমি ভেজাব আজ
সকল শূন্য করে

পড়শি

আমার একটা কদম বৃক্ষ আছে!

আমি তাকে নীপ বলে ডাকি।

আইনত গাছটা আমার নয়,

আমি ঠিক তার পাশের বাসায় থাকি!

কিন্তু তাকে ডেকে আমি বলি,

ওগো নীপ তুমি কিন্তু আমার!

তুমি আমার তুমি আমার শুধুই!

তোমার ছায়ায় দিবারাত্র শুই।

কদম আমার কথায় মাথা নাড়েন,

চুলের বেণি বৃষ্টিশেষে ঝাড়েন।

বলেন, যখন আকাশ থাকে মেঘলা,

আমার ছায়া কোথায় তখন? একলা

আমি তখন ছায়াবিহীন একাকিনী!

জলের কাছে মেঘের কাছে ভীষণ ঋণী।

আমি বলি, ছায়া তখন বিশ্বজুড়ে

তোমাকে পাই ঠিক তখনই অন্তঃপুরে

জানলা দিয়ে চেয়ে থাকি তোমার দিকে,

মাথা রাখি তোমার কোলে, লোহার শিকে...

বাতাস ওঠে, পাতা নড়ে, হাসেন নীপ!

আমার কিযে ভালো লাগে তার সমীপ।

আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে

আমার কদম বৃষ্টিভেজা শাড়ির দামে

জড়িয়ে থাকেন

আমি তাকে নজর করি

সোনার পুষ্প অঙ্গে দোলে, নীলাম্বরী

রাধার কাঁখে

আমার কদম আমার নীপ পীনোন্নত

আমার কদম আমার নীপ ব্রীড়ানত

বৃষ্টি থামে রৌদ্র ওঠে

কদম ছায়া কদমে তার আপনি লোটে

আমিও ঠিক লুকোই যে তার ছায়ার সাথে

এমনভাবে থাকতে পারি রাত-বিরাতে!

কদম ফুলের গায়ের গন্ধে মাদকতা!

আমায় বলে, তিনি কিন্তু পতিব্রতা!

বর্ষা গেলে শরৎ আসে, হেমন্ত যায়

শীতের শেষে বসন্ত তার বাতাস কাঁদায়

কাঠুরেরা আসে তখন কুড়াল হাতে

আমার কদম ন্যাড়া হবেন রক্তপাতে

কদম বলেন, আমি নাকি তোমার একার

এ জগতে কেউ কি আছেন আমায় দেখার

এমন করে ছাঁটবে আমায় প্রতি বছর!

দেখবে তুমি, জানালা আর তোমার কছর!

হাত বাড়িয়ে বলি আমি, কাঠুরে ভাই,

এমন করে কদম গাছকে কাটতে যে নাই!

হাসে ওরা। স্বত্ব তোমার আছে নাকি!

আমি বলি, আমি যে ওর পাশে থাকি।

ওরা বলে, থাকলে পাশে

গাছের কিবা যায় বা আসে

নিজের উঠান জুড়ে একটা বৃক্ষ লাগাও

সেই গাছেতে বছর ভরে পত্র জাগাও

আমরা সে গাছ কাটতে আসব না কখনও

কাটতে বলবে না কোনোদিন ঊর্ধ্বতনও

আমার একটা কদম আছে পড়শি কদম

আমায় দেখে হয়ে পড়েন হতোদ্যমও

আমি ভাবি আমার কদম ব্যক্তিগত

জানি সেটা সম্ভব নয় আইনত

বর্ষা এলে তবু যখন কদম ফোটে

রেনু ঠিকই এসে আমার অঙ্গে লোটে

আমি তখন হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিকে ছুঁই

বৃষ্টিজলে আখর লিখি, রয় না কিছুই