Thursday, August 13, 2015

helapakri

তুই কি আমার দুঃখ হবি?

এই আমি এক উড়নচন্ডী আউলা বাউল
রুখো চুলে পথের ধুলো
চোখের নীচে কালো ছায়া।
সেইখানে তুই রাত বিরেতে স্পর্শ দিবি।
তুই কি আমার দুঃখ হবি?
তুই কি আমার শুষ্ক চোখে অশ্রু হবি?
মধ্যরাতে বেজে ওঠা টেলিফোনের ধ্বনি হবি?
তুই কি আমার খাঁ খাঁ দুপুর
নির্জনতা ভেঙে দিয়ে
ডাকপিয়নের নিষ্ঠ হাতে
ক্রমাগত নড়তে থাকা দরজাময় কড়া হবি?
একটি নীলাভ এনভেলাপে পুরে রাখা
কেমন যেন বিষাদ হবি।

তুই কি আমার শুন্য বুকে
দীর্ঘশ্বাসের বকুল হবি?
নরম হাতের ছোঁয়া হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
নিজের ঠোট কামড়ে ধরা রোদন হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ হলুদ বিকেল বেলায়
কথা দিয়েও না রাখা এক কথা হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
তুই কি একা আমার হবি?
তুই কি আমার একান্ত এক দুঃখ হবি?

ম’রে যেতে সাধ হয়

শাহানা, তুমি গোলাপী জামা প’রে জীবন্ত গোলাপের মতো
ক্যাম্পাসে এসো না, আমার খারাপ লাগে।

সখী পরিবৃতা হয়ে মোগল-দুহিতার মতো
করিডোরে অমন ক’রে হেঁটো না, আমার খারাপ লাগে।

শাহানা, তুমি চিবুক নাড়িয়ে
রাঙা মাড়িতে
দুধ শাদা হাতে
লালিম জিহ্বায়
গিটারের তারের মতো বেজে উঠো না —
দরদালান কেঁপে উঠে, ঢিল পড়ে বুকের পুকুরে,
কাঁপে পানি থিরিথিরি, আমার খারাপ লাগে।

শাহানা, তুমি টিফিন আওয়ারে ক্লাসরুমে ব’সে
অমন করে রাধার মতো দীর্ঘ চুল মেলে দিও না
অন্ধকার করে আসে সারাটা আকাশ
নিবে যায় সবগুলি নিয়ন
কালো মেঘের উপমা দিতে আমার ভালো লাগে না।

শাহানা, তুমি ক্যাফেটেরিয়ায় নিরেট চায়ের কাপে
ওই দুটি ঠোঁট রেখো না;
নিদাঘ খরার পোড়ে ঠোঁটের বাগান,
মরুভূর মতো জ্বলে তৃষ্ণার্ত সবুজ;

আমার মরে যেতে সাধ হয়।

গরম

ঝড়ে উড়ে যায় যায় গো
আমার মুখের বসনখানি
আমার বুকের বসনখানি
আমার রইল না লাজলজ্জা

এত কেন গরম বর্ষাকালে
আমার শরম ওড়ে মেঘের ফোলা পালে
ঘামে ভেজে আমার গৃহসজ্জা
ঘামে ভেজে আমার অলস শয্যা

লোডশেডিং কেন বর্ষাকালে?

এতই যদি গরম বর্ষাকালে
আমি তবে ছাদের জলে ভিজি
এতই যদি গরম বর্ষাকালে
আমি তবে বৃষ্টিজলে ভিজি

ভিজুক আমার যত গরমগুলো
ভিজুক আমার যত শরমগুলো
মধ্যরাতে ছাদে আমি ভিজি
বিজলি জ্বলুক সব উজালা করে

আমায় আমি ভেজাব আজ
সকল শূন্য করে

পড়শি

আমার একটা কদম বৃক্ষ আছে!

আমি তাকে নীপ বলে ডাকি।

আইনত গাছটা আমার নয়,

আমি ঠিক তার পাশের বাসায় থাকি!

কিন্তু তাকে ডেকে আমি বলি,

ওগো নীপ তুমি কিন্তু আমার!

তুমি আমার তুমি আমার শুধুই!

তোমার ছায়ায় দিবারাত্র শুই।

কদম আমার কথায় মাথা নাড়েন,

চুলের বেণি বৃষ্টিশেষে ঝাড়েন।

বলেন, যখন আকাশ থাকে মেঘলা,

আমার ছায়া কোথায় তখন? একলা

আমি তখন ছায়াবিহীন একাকিনী!

জলের কাছে মেঘের কাছে ভীষণ ঋণী।

আমি বলি, ছায়া তখন বিশ্বজুড়ে

তোমাকে পাই ঠিক তখনই অন্তঃপুরে

জানলা দিয়ে চেয়ে থাকি তোমার দিকে,

মাথা রাখি তোমার কোলে, লোহার শিকে...

বাতাস ওঠে, পাতা নড়ে, হাসেন নীপ!

আমার কিযে ভালো লাগে তার সমীপ।

আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে

আমার কদম বৃষ্টিভেজা শাড়ির দামে

জড়িয়ে থাকেন

আমি তাকে নজর করি

সোনার পুষ্প অঙ্গে দোলে, নীলাম্বরী

রাধার কাঁখে

আমার কদম আমার নীপ পীনোন্নত

আমার কদম আমার নীপ ব্রীড়ানত

বৃষ্টি থামে রৌদ্র ওঠে

কদম ছায়া কদমে তার আপনি লোটে

আমিও ঠিক লুকোই যে তার ছায়ার সাথে

এমনভাবে থাকতে পারি রাত-বিরাতে!

কদম ফুলের গায়ের গন্ধে মাদকতা!

আমায় বলে, তিনি কিন্তু পতিব্রতা!

বর্ষা গেলে শরৎ আসে, হেমন্ত যায়

শীতের শেষে বসন্ত তার বাতাস কাঁদায়

কাঠুরেরা আসে তখন কুড়াল হাতে

আমার কদম ন্যাড়া হবেন রক্তপাতে

কদম বলেন, আমি নাকি তোমার একার

এ জগতে কেউ কি আছেন আমায় দেখার

এমন করে ছাঁটবে আমায় প্রতি বছর!

দেখবে তুমি, জানালা আর তোমার কছর!

হাত বাড়িয়ে বলি আমি, কাঠুরে ভাই,

এমন করে কদম গাছকে কাটতে যে নাই!

হাসে ওরা। স্বত্ব তোমার আছে নাকি!

আমি বলি, আমি যে ওর পাশে থাকি।

ওরা বলে, থাকলে পাশে

গাছের কিবা যায় বা আসে

নিজের উঠান জুড়ে একটা বৃক্ষ লাগাও

সেই গাছেতে বছর ভরে পত্র জাগাও

আমরা সে গাছ কাটতে আসব না কখনও

কাটতে বলবে না কোনোদিন ঊর্ধ্বতনও

আমার একটা কদম আছে পড়শি কদম

আমায় দেখে হয়ে পড়েন হতোদ্যমও

আমি ভাবি আমার কদম ব্যক্তিগত

জানি সেটা সম্ভব নয় আইনত

বর্ষা এলে তবু যখন কদম ফোটে

রেনু ঠিকই এসে আমার অঙ্গে লোটে

আমি তখন হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিকে ছুঁই

বৃষ্টিজলে আখর লিখি, রয় না কিছুই

No comments:

Post a Comment